বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০১০

উত্তরসূরীর প্রতি

আমার সর্বশেষ শব্দগুলো হাতে নাও ধরে দেখো
প্রাসাদ ছাড়িয়ে দূরে এই পুরাতন মৃত বৃক্ষ
এর নীচে ছিলাম, পরিত্যক্ত প্রাচীর ডিঙিয়ে
চলে যাও এক্ষুণি দূরে, তবু ধরে রাখো কিছুকাল
প্রাথমিক সৈকত তোমার, আর প্রতিটি বালির পৃথক অস্তিত্ব
ডানাভাঙ্গা গাংচিল চিৎকার, সামুদ্রিক ঝড়
এদিকে তাকাও, এই আমি নিবিড় ছিলাম
এই পথে একেবারে চলে যাও, শুধু ধরে রাখ আরো কিছুক্ষণ
আমি বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাই, শুয়ে পড়ি মাইলের পর মাইল
পথদের বলে যাও ভুলে যাবে, না ফেরা পথের মানচিত্রে
এই ভীষণ আপন ঘাসজীবী পুরাণ পাথরের পর
ডাল-রুটি খেয়ে বাঁচা নগণ্য মানুষগুলো
একবার ছুঁয়ে নাও তারপর ছুঁড়ে ফেলো
ক্রমশ আসে মৃত মানুষের সারি তারপর
এখানে নয়, ফেলে যাও কোন ঘাস সমৃদ্ধ প্রান্তরে
আর বুকে করে নাও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভালবাসা
শুভকামনা, ঠিকমতো বাঁচো, বাঁচতে দিও ।।

২৯ জুলাই ২০১০

ত্রিভুজ

একটা চোখ
কতটুকু ভুল কতটা বানানো
অব্যবহৃত বোতামের ভীড়
সবার কেবল বরফ কেনার তাগিদ
তাড়া করেছি জন্ম - জন্মান্তরে
ঠিকানা পাইনি, কিছুতেই হয়নি কিছু...

এ কি নিকট না দূর অসংখ্য মাইল
গত জন্মে ছিল কী না
অথবা পৌঁছে যাব আগামী হাজার জন্মে
ঘাস নেই, ভয়ানক সব বুকের এক প্রশস্ত ক্ষত...

ছেঁড়া পকেট পুরনো ডায়েরি
কে বেশি ছন্নছাড়া
নাকি মিলেমিশে মাখে
একসাথে সুর্যাস্তে থাকে

ছিপছিপে মাছরাঙা ছিলাম
হচ্ছি ত্রিভুজ
হচ্ছি .. হতে হতে পুড়ে যাচ্ছি
জ্বলে যাচ্ছে আঙ্গুল ।।

বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০১০

কথনঃ ২৮ জুলাই ২০১০

থাকি
আবার থাকি না কখনও
দূরে না
আবার জড়াই না বুকে

বিপদের ঝোলে নানরুটি ভরি নিজস্ব পেটে
আছড়ে ভাঙ্গি শরীর অসুখ
গিলতে গিলতে বাদশাহী ফিরনি
অসংখ্য এঁটো থালা
গায়ের গন্ধে
হাড়ের শব্দ শুনি
আঙ্গুলের কড় গুনি

মাঝদিনে ধুতে দিই গা
যাই না আবার
চলে যাই
একেবারে ।।

শারীরিক সেলাই

শরীরের প্রচুর কাছে
একটি জামার নতুন বোতাম
কেটে কেটে কারচুপি কারসাজি
কালো খয়েরী.. যাচ্ছে
যাবে....

বুকের কাছটা কেটে পাশে টেনে বসিয়ে
এবার আর সুতো ভরোনা
উল্টোপাশ সরিয়ে, আবার -
গুলিয়ে ফেলছ,
ওটা পুরনো
নতুনটা খামছে ধরো,
সবাই কাটছে জুড়ছে
উরুতে, হাঁটুতে, পায়ের পাতাতে,
চামড়াতে অন্তবর্তী সম্ভোগে
তরুণী কিংবা বৃদ্ধা রমণী
আঁটসাঁট...
এবার কেটে ফেল
ছিঁড়ে ফেল,

আর টেনোনা
ছুঁড়ে ফেলে দাও দূরে,
অথবা নিজস্ব অধিক কাছে ।।

২৮ জুলাই ২০১০

শীত ... তুষারমোরগ ... মাদী নেকড়ে

... ভয়ংকর শীত ..
এক তুষারমোরগের মাথা উঁচু পেরুল বরফের চাঁই
... এক ... পৌনে এক ... আধা ... শূন্য ...
... এক মাদী নেকড়ে ...
... কুৎসিত বাচ্চাগুলো না খেতে পেয়ে ... মারা পরত তাই ..
... আধা ... দেড় ... পৌনে দুই ...
তুষারমোরগের উরুর হাড়ে মাংসে ...
... ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাঁতের দাগে ...
... চলমান শীত ... শ্যাওলার ঘন সবুজ ...
তুষারমুরগি, এবার পালা তোর...
... চিৎকার করে ডেকে পার হ বরফের চাঁই ...
... আধা ... এক ... দুই ...

২৮ জুলাই ২০১০

রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০১০

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (চার)

জানলায় না দাঁড়িয়েও তুই বাঁচিস
আর তোর মনও খুব ভাল থাকে,
তুই তো জানবিও না কোনদিন
রাত আটটার ঝুমবৃষ্টির গল্পগুলো...
আমি কার জন্য ভিজেছি ছাতা গুটিয়ে,

দাঁড়াস না কোনদিন জানলায়
শুধু কাঙালের মতন তোর ছায়ার অবয়ব
খুঁজি জানলার নতুন পর্দায়,
কেবল কল্পনায় বসিয়েছি তোকে গাঢ় করে...

সচেতন মস্তিষ্কে মুছে দিতে পেরেছিস
বেশ তো ব্যক্তিগত পৃষ্ঠার পুরুত্ব,
আমিই কেবল হাইওয়ের উপর দু'হাত তুলে
কত অপরিচিতের গায়ের ঘ্রাণে -
তোর মৃত্যুময় ঘ্রাণ খুঁজি ।।

শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০১০

আধুনিক আবর্জনায় সমৃদ্ধ জুতোর তলা (চতুর্থ পর্ব)

নিরেট ধোঁয়ায় বসে কেউ খাবে সুখ, আর একমনে হেঁটে যাবে যারা বোকা গোবেচারা । যারা ঘুম থেকে হাতে করে স্বপ্ন নিয়ে ওঠে, পথের ধারে ঘুমাতে গিয়ে ভাবেনা । অথবা যারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিছানায় শোয়, তাদের ঘুম কতটা !

মাটিতে বসেই খাওয়া যায়, তবে বহুমূল্য ডাইনিং টেবিল, তাতে কত বাড়ে খাদ্যগুণ ! কারা খায়, কাদের খেতে হয়, আর কারা খাবেনা, ছড়াবে ! একমাত্র ফুলকে ছিঁড়ে গাছকে নিঃস্ব করে যাবে, তারপর পায়ে মাড়াবে ! আর মরে যাবে
বারবার ।

২২ জুলাই ২০১০

বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০১০

সম্পৃক্ত সবুজের অবসন্ন মানুষ

হয়তোবা রোদ জল এমনকী হাওয়াও
ক্ষুধার্ত যারা জীব অর্থ হীন অর্থহীন
অগণন জলের রোদ প্রহারে
সাম্রাজ্যবাদীর চর্বির বিস্তারে
জিরজিরে হাড়ে অসংখ্য উঁচু
উল্লম্ব ঘুম
তার থেকে জন্মানো অদৃশ্য বাসা
রেখার পাথরে শখের সুখ
গ্রীবা আর উরুর আন্তঃদেহ ক্রীড়া
হাত পেতে অজস্র চাহিদায়
বাণিজ্যিক জলে গ্লানির অধঃক্ষেপ
সুখ আর ভালবাসা
মূদ্রার উল্টোপিঠে ।।

২২ জুলাই ২০১০

শনিবার, ১০ জুলাই, ২০১০

অসুখ - ০৭

ভরা চাঁদ হেলতে হেলতে গায়েব
নীল-হলুদ ডোরাকাটা বাড়ির আড়ালে
বিছানায় চিত শুয়ে নিজেকে যতটা আঁকড়ে পারি
পাই পাই শুধে যাই যাবতীয় স্বপ্নদেনা
পাশে শুয়ে বেজন্মা অন্ধকার
নষ্ট নৈঃশব্দে অপরিশোধিত অস্থির প্রবঞ্চনা
রাত বেশ ছিল, অযথাই সকাল এসে যাবে
রোদে পুড়বে বারান্দা, ঘরদোড়

চোখ মেললে দূরে সভ্যতার সপ্তম তলা
বহু নীচে সামান্য মানুষ যারা আজীবন উদোম পিঠে
রোদ শুষে বুকে শূন্যতা পোষে
দ্রষ্টব্য দূষিত বৃষ্টি, কারখানা-নদী যৌথ মিথস্ক্রিয়া
টেম্পো-বাসের জট ঠেলে হেঁটে যাওয়া মানুষ
শুকনো রক্তের মত ইট দিয়ে গড়া দালান
উপরতলার বিলাসিতার দায়ভার বয়ে যায়
আজন্ম দাগ মুছে যায় ছোটলোকবৃন্দ
আর আমি আছি নিজের জন্য অপেক্ষায়
কতটা হাস্যকর, ভাবা যায় ।।

০৭ জুলাই, ২০১০

অভ্যস্ত ছিল এতকাল সমগ্র শহর

অভ্যস্ত ছিল এতকাল সমগ্র শহর
যখন প্রতিটি বারান্দায় ওড়ে তোমার সালোয়ার,
দেখতে হুবহু এক কিছু পোস্টার সাঁটা উরুতে আমার
ধুলো পথ হেঁটে হেঁটে উঠে আছে সুউচ্চ পাহাড় পিঠ বরাবর
ঘষে ঘষে মুছে ফেলা অপরূপ সব সাগর বন্দর
গায়ে জঘন্যতম পোষাক তোমার প্রতিপক্ষর
পৃথিবীর যাবতীয় শপিংমল কেননা তোমার
যেসব পিঁপড়ে হানে কামড় সবচে' বিষধর
ওরা থাকুক শুয়ে তোমার স্যান্ডউইচ জুড়ে
সময় সুযোগ বুঝে খাওয়ানো যাবে তা
সমস্ত বারান্দা হতে ছুঁড়ে ফেলা হবে তোমার সালোয়ারগুলো
সেসব কুচি কুচি'র সুবিধার্থে পোষা হবে স্বাস্থ্যবান সব ইঁদুর ।।


০৬ জুলাই ২০১০

কথনঃ ০৬ জুলাই ২০১০

রিকশা আসুক
কাকরা ডাকুক
শুদ্ধ পাগল হাসতে থাকুক
বেগুন ডিম আর কলার আড়াল এক কিশোরী অংক কষুক
পাশের ফ্লাটে রান্নাঘরে প্রেশার কুকার ডেকেই চলুক
নিধু চিঠি নাইবা পাঠাক চিঠিওলা তবুও আসুক
কড়া রোদে আমের আচার শুকিয়ে যায়
রূপোলী রং পাতিলঅলা রূপোর পাতিল করুক ফেরি
জানলাধারে হঠাৎ দেখি জুতো যাচ্ছে চুরি
বিদ্যুতঅলার সূক্ষ্ম শিস্ এ যাচ্ছে দুলে হৃষ্টপুষ্ট ইস্মাতারা
তারস্বরে শিশু কাঁদুক
ছাদের গায়ে শালিক বসুক ছায়া মেলে
শাড়িওলা শাড়ি বেচুক সুর করে টেনে টেনে
লাল পর্দার আড়াল ছিঁড়ে দু'জোড়া পা আনুভূমিক জড়িয়ে থাকে
ক্ষুদ্র বালক খাচ্ছে গালি
উটকো দু'লোক জঘন্য আর নগণ্যতে মারামারি
একটি মানুষ গীটার বাজায় চারটে কিশোর ভীড় করে খায়
হতচ্ছাড়া কোন এক বালক নখ কামড়ায়
খাতার মধ্যে শব্দ বসায় ।।