মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১০

It ain’t me, babe (BOB DYLAN,1964) এর অনুবাদ

আমি অন্ততঃ নই

এবার নিজের মতোন বাঁচো
আমি নই
আমি অন্ততঃ নই
যেমনটা চাচ্ছ শক্তপোক্ত কেউ বুকে আগলাবে
ঠিক বেঠিক দুটোই হতে পারো তবু
চাহিদামাফিক দরজাগুলো খুলে দেবে,
ঠিকমতোন মাটির উপর দাঁড়িয়ে দেখো
ঠিক যেমনটা চাইছিলে
তোমার ইচ্ছে হলেই যে
বন্ধ করবে চোখ
থামাবে হৃদয়
মরে যাবে এক মুহূর্তে তোমার জন্যে
আমি আর অমনটা কবে,

গলতে গলতে রাতের কাছে ফিরে যাও
ভেতরে যা কিছু দেখছ সব-ই পাথর
নাড়া দেবার মতোন কিছু আর কই
আমি একাও নই আর
খসে পড়ার আগ মুহূর্তে
যে টেনে ধরবে তোমায়
একের পর এক ফুলের বাগান খোঁপায় গুঁজে
সেলফোনের নিযুত ইউনিট ধ্বংস করে
খামচে থাকবে এমন সঙ্গীই তো চাও
আমার দ্বারা হবেনা বন্ধু
আমি তোমার জন্য নই কোনদিন
আমায় অন্ততঃ খুঁজছ না... ...

http://www.bobdylan.com/#/songs/it-aint-me-babe

শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১০

কথন :: ১৭ ডিসেম্বর ২০১০

শূন্য শূন্য শূন্য
শূন্য বসবাস
বৃত্তবদ্ধ বাক্য কাল
শব্দ ইতিহাস

রোদ হয়েছে বলেই না
বৃষ্টি সারাক্ষণ
একলা বর্গক্ষেত্র তার
ব্যর্থ আয়োজন ---


কত আর বোঝাবো নিজেকে এভাবেই ভাল
ভুল ঠিকানার চিঠি বারবার আসে, বারবার

একটিবার ঘুরে দেখুন, কতকাল ডানা মেলে আছি
আমাকে ছেড়ে, ডানারাও উড়ে যাবে কোনদিন, একদিন

বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১০

কিছু ব্যক্তিগত শব্দের প্যারেড

কার্টিজ আর ক্যানভাসে কানাগলি খিলখিল

সোনারিল আর সুঁইচোরা, সেলফোনে মেঘ ভাসে

পথভোলা কচ্ছপ দূরে থাকে কাগজের রাজহাঁসে

শীত থাকে, থেকে থেকে অস্থির শব ভীড় ছাউনীর

বাটারবন

বেনসন

খিলিপান

চুম্বন ও আলিঙ্গন...

অশরীরি প্রেমরোগ বরবটি অ-বালক

জমে থাকে মরে থাকে খুব ভোরে খুব সাঁঝে

পাপজীবি ভাত মাখে, আঙুলেতে জিব রাখে



শিখে ফেলে ঠোঁট আর দাঁত বড় কাছাকাছি

চুমো পেয়ে পিষে গিয়ে পুড়ে যায় কাকপাখি



সোনামাছ ভুলো রোগে ভালবাসে মরীচিকা রূপোরং ;

সোনামাছ ভুলো রোগে ভালবাসে মরীচিকা রূপোরং ;

রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১০

লেগে আছে গভীর চাবির দাগ বিশ্বস্ত তালায়

বেঁচে ছিল এক
বাক্য ভালবাসার
গভীরে আমার
আগুন বৃত্তে
বায়বীয় সুখে
একই কবিতার বই
সামান্য চিৎকার
আরো গভীরের
ঠাসবুনটের
প্রাসঙ্গিক পাপ,
কান্নার গায়ে
বেঁচে ছিল যারা
পুতুলের ছাঁচে
কিমোনো জ্যাকেটে
লেপ্টে বাঁচা সোমত্ত কস্তুরী,

আঙুলের বড্ড কাছে
দ্বিতীয় জীবনের মূল্যমান
গভীর চাবির দাগ
পুরাতন বিশ্বস্ত তালায় ।

_________________
২৮ নভেম্বর ২০১০

শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১০

এক জীবনে সবাই যেন অন্যমানুষ

এক জীবনে অনেকগুলো অন্যমানুষ
যে যার মত খাচ্ছে, পরছে, ছুটছে আবার করছে চুরি
যে যার মত ছুটছে মেলায়, পড়ছে ফাঁদে, যাচ্ছে হেরে
দলবেঁধে সব টেবিল ঠুকে তবলা করে
মাঝে মাঝে ঝগড়া জমে, ট্রাফিক জ্যামে, বৃষ্টি নামে
পথের ধুলো হল্লা করে, জুতোর তলায়, চায়ের স্টলে
স্টেশন জুড়ে ঘুমায় মানুষ
সেই মানুষই হাজার টাকার ওড়ায় ফানুস
দেহের দোকান যাচ্ছে জমে, পরাক্রমে
রুটির দোকান চলছে চলে,
ময়দানে আর বাসস্থানে রাজনীতি তার নখর গাড়ে
হঠাৎ দেখি মরছে মানুষ অকারণে পথে পড়ে,
অস্তিত্বের সংকট তার মেলছে ডানা সংসারে আর সহবাসে
নিজের কাছে মিথ্যে বলা, ইন্দ্রকলা, চার অক্ষরের দীর্ঘশ্বাসে

হঠাৎ দেখি কড়ে গুনে কিছু আছে উল্টো মানুষ
লিখতে বসে, আঁকতে বসে, গাইতে বসে একলা ঘরে
শিক্ষিতদের মিছিল যখন বিক্রি করে মগজখানা
এরা তখন স্বপ্ন বানায় বাজার ভুলে চিলের ডানায়
জ্ঞানপাপীদের মিটিং থেকে মানুষ রাঁধার উপায় বেরোয়
কবি তখন আলতো করে আকাশ জুড়ে ইচ্ছে উড়োয়

এক জীবনে সবাই যেন অন্যমানুষ
যে যার মত হচ্ছে বড়, ঝুলছে বাসে, পড়ছে প্রেমে
যে যার মত করছে বিয়ে, খাচ্ছে বিষ আর যাচ্ছে মরে
আজো কেন বুঝিনা ছাই এসব ভাবা বেআক্কেলে
নিজে তো সেই কেবল মানুষ
লোকজন আর ধুলোর ভীড়ে ।।

__________
২৫ | ১১ | ২০১০

রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১০

চূড়ান্ত পাঠ


জগদ্দল ধূপ,
পুজো পোড়ে বুকের তলায়,
লিখতে বা পড়তে পারছিলামনা
আর গাড়ি - বাস পাশ ঘেঁষে অনাবাদী সড়কদ্বীপ
মাথা উঁচিয়ে বিলবোর্ড তখন খুব দূরে
আমায় কানে ধরে বুঝিয়ে দিল দুঃখ, আর
পেন্সিলে লিখল সরকারী সুখ
অভ্যাসে তাকাই মৃত মুখে, রূক্ষ আর অতিরিক্ত রঙিন -
ওরা বলে থাকে একে অন্যকে সহবাসে একা একা
বিভিন্ন দরকারী সব কথা, আর
বুক চিরে দেখিয়ে দিল রক্ত,
না না, খাতায় যায় নি লেখা কোনদিন,


কতটা বিকার হলে চর্তুদিকে কেবল না, শুনতে, হাঁটতে, আর
গলতে গলতে রোদের কাছে কাকে যেন কী একটা দেখাতে চাই,
দেখিয়ে দিই ডিকশনারির পৃষ্ঠা ছেঁড়া, শিখিয়ে দিল প্রেম
যে আমি ছিলামও না, থাকিও না, কোনদিনই,
সবাই কেবল ছায়ার মধ্যে আঁচড় কেটে যায়
অধিক বোকা খুবলে খায় বৃষ্টি পুড়তে পুড়তে, আর
রোদ ভিজতে ভিজতে শিখে ফেলি স-ব ঠিকঠাক ।।

_______________ _
২২ | ১০ | ২০১০

বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১০

যদি ভাবো একই ভুল




কেমন হবে যদি রাত আমার হয়ে গল্প লেখে
জানলা দিয়ে দেখো বহু দূরের কোনো চাঁদ
মেঘের ভেতর সেই গল্প দ্যাখে, দ্যাখে
দ্যাখো যদি একই রাত আঁধার প'রে ডুবতে বসে
স্মৃতির পাঁজর খুলে হাতড়ে খুঁজো সেই হাত
ঝাপসা আদর এক রঙ বসেছে, বসে
যদি ভাবো একই ভুল ‍-

ভাবছে ভাবেনা যারা ভাবুক দলে চলে
টুকরো জীবন দলে চাইছে জীবন আরও
কাগজে কলমে তবু বক্তৃতা শোভা পায়
শোভা পায় শোভা পায় মানবতা ছেড়ে যায়

ঝরছে ঝরে ধুলো ঝরলনা তবু সুখ
সবুজ সবুজ তবু সবুজ পাতার ছবি
শহর শহর শুধু শহর দেখল সবই
মানুষ মানুষ সব সভ্য মানুষ

যদি ভাবো একই ভুল খাতা জুড়ে পদ্য করুক
ভুল ভেবেছ তুমি মানুষ বড়ই অদ্ভুত
জানেনা জানেনা তবু জানার ভানেই জ্বলে ধূপ ।।

শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১০

প্রকৃত বিপদ


জানেন
এই দুর্দান্ত স্কেলগুলো কি দারুণ ওজন মেপে নিচ্ছে !
এই যে উল্টোদিকের বিরক্ত মানুষগুলো
পারলে সময়ের গায়েও মেওনিস নিচ্ছেন
গাদা গাদা খবরে সকালটাকে টেনে
যদি কাদায় নামাতে না পারেন
বাসে সিট হবে না
এই নিন গাণিতিক কলা,

যতখানি ঘাম,
তার থেকে আরো বেশি আপেলের দাম
এই হল মাধ্যমিক বিপদ ;

আজ অক্টোবরের ষোল -
এবার মেয়েটা ঠিক ঠিক আঠেরোতে পা দিত
তুতুনের সত্যি ঠিকানাটা আজও দিলেননা কেউ
সত্যি সত্যিই যা-কিনা খুঁজছিলাম গতবার শীতে,
এবারও দেরি করে পেড়ে আনি মেহেন্দির লাল
আর পাঁচটাকা দরের ঢাউস আমলকির ভীড়ে
প্রতিফলক কাঁচ ঘিরে বরং খুব আছি
বয়স্ক বেগুন,

আর আমার কাঁধব্যাগে প্রচুর ভার
এ হচ্ছে প্রকৃত বিপদ ।

শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০১০

দেখেছি জল কেবল হাওয়ায়

সকাল থেকে যতবারই আকাশ দেখেছি
আকাশ দেখি বলে ভিজে গেছি
বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল,
বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি
দেখেছি জল কেবল হাওয়ায়
ভেজা বারান্দার গোপন মায়ায়
বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল,
বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি

ভিজতে ছাতা হাতে ভিজছে মানুষ
ভিজতে না চাইলেও ভিজতে হবে
শুকনো দেহের ঘরে বৃষ্টি হবে
কেউ দেখেনি কার দরোজায়
কে যে এসে ফিরে যে যায়
দেখা হবে ভেবে ভেবে
চলে যাবে তবু রাত পোহালে
বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল,
বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি কেবল, বৃষ্টি হবে
জানলা খুলে রেখো খাতা ভিজুক
স্নানের ঘোরে সব শব্দ নাচুক
একলা রবে সারা বিকেল
এও কি হয়, এও কি হয়, কী যে হবে
কার দরোজায় বৃষ্টি এসে হাত বোলাবে

দেখেছি জল কেবল হাওয়ায়
ভেজা বারান্দার গোপন মায়ায়

সেলফোনে আর চার্জ দেবোনা

কমছে আলো, ভাবছিনা
সাদা চিঠি পড়ে আছে
দেখেও তা দেখছিনা
প্রাপকের ঘর শূন্য বলে
চিঠি কোথাও যাবে না

যাচ্ছে কোথায় একটি দিন
কান্না চেপে ভ্যাপসা রোদে
খবর রান্না হচ্ছেনা
শব্দগুলো যাচ্ছে দূরে
সঙ্গী হতে চাচ্ছেনা

এ তো সবে শুরু হল
আরো ছিল হচ্ছে হবে
নিয়ন আলো হলদে ঠিকই
হাঁটবো একা কিভাবে

কমছে আলো
কমছে কান্না
পুড়ছে চিঠি দেখছি না

পণ করেছি থাকবো একই
পাল্টাতে আর পারবোনা
ভাল্লাগেনা যা যা কিছু
ডায়রীতেও আর লিখবো না

সেলফোনে আর চার্জ দেবোনা
সেলফোনে আর চার্জ দেবোনা
সেলফোনে আর চার্জ দেবোনা

বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১০

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (সাত)

শহরের এতগুলো লোক ভুল বুঝে এদিকে তাকালো
আমি কাঁদিনি একটুও কোনদিন, কোনদিন
সবাই তো আর রীতুর মতোন পাষাণ নয়
এমনকি এই
যানজটের বিষে এলোমেলো মুমূর্ষু লোকগুলোর
এতই দুঃখ ছিল ;
লোকদেখানো উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছি, ডুবে যাচ্ছি
বৃহৎ ক্ষত সমৃদ্ধ পরিমিত মানুষ ;

মেঘগুলো উড়তে উড়তে কাল বৃষ্টি ভেজালো খুব
ছাতা নিয়েই ভিজতে হলো, একদম একা
এত দুঃখ ছিল, এত বেশি দুঃখ ছিল...

__________________________________
(শেষের তিন লাইন প্রথমে যাবে
প্রথম চার লাইন তারপর বসবে,
বাকীরা যেভাবে বসে আছে, থাক)

বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ওত্তো রেনে কাস্তিইয়োর প্রতি


তোমার তখন একত্রিশ
তাজা আগুনের স্বাদ নিতে নিতে চূড়ান্ত নির্বাসন,
এই ওরা পেরেছিল বারবার, যার শুরু যখন তুমি সতেরো,
খুঁজেছিলে সাধারণের স্বপ্ন আর বিপ্লব রাজনীতির ভুল পথে
অথবা যার কোন পথ নেই,
বলেছিলে গল্প, হাতিয়ার আর ক্ষুধার চিরন্তন সংঘাতের
চোখে তুলেছিলে আঙুল সেইসব বুদ্ধিজীবীদের যারা রাজনীতি করেনা,
শুধু প্রচুর সুখে আর প্রাচুর্যে হয়ে থাকে অথর্ব, অকেজো
শিখিয়েছিলে বিপ্লবের দ্যুতিময় অক্ষরগুলোকে কী করে
গাঁথতে হয়, বাসতে হয় নিজস্ব আবেগ এবং ভাষায়
আর গার্সিয়ার সেই বিধবা, সাতাত্তরের সেই বৃদ্ধা
আর তার গিলে ফেলা অপমান এবং বাসোচ্ছেদের কান্নার ফোঁটা
হি হি করা ঠান্ডার ভেতর অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে, অবিচারের কষ্ট,
আন্তোনিও আর তার নীল পাখি, স্পার্তাকুস আর তার ভাইদের জন্য
যারা রোমক ক্রুর অত্যাচারে ক্রুশে বিদ্ধ হবার পরও
বাতাসের কানে বলে গেছে, এসপেরানসা - আশা
করেছিলে প্রাচীন প্রশ্ন, অবস্থাপন্নের কুকুর আর দরিদ্রের কপাল
ভুগোলবিহীন ভালবাসা, লবণাক্ত তারার গল্প
আর বলেছিলে নির্বাসন, যা কিনা দীর্ঘ এক এভিনিউ
একা পথ হাঁটে তুমুল বিষাদ, সঙ্গী অসহ যন্ত্রণা ;

বরফের ভেতর তোমায় দেখেছি,
কোন এক আলোকচিত্রী তুলতে চেয়েছিল তোমার চোখ
পুরু ফ্রেমের আড়ালে, ছেপে দিয়েছিল বিষাদময় সৌম্যকান্তি
আর গোটা জীবন ঝাপসা মেঘের আড়ালে
গুয়াতেমালা আর গুয়াতেমালানদের জন্যে বিপ্লব
তোমার স্বপ্ন ।।
______________________________
২১ আগস্ট ২০১০
(কৃতজ্ঞতা : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)



[ওত্তো রেনে কাস্তিইয়ো : গুয়াতেমালান কবি, বিপ্লবী এবং নাট্যকার । ১৯৩৬ এ জন্ম, রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন । সতেরো বছর বয়সে নিজ দেশ হতে দশ বছরের জন্য নির্বাসিত হন এবং এল-সালভাদর চলে যান । সেখানেই তার পড়াশোনা এবং সাহিত্যচর্চা । সেখানে কবি রক ডালটন এর সঙ্গে তার পরিচয় হয় । ওত্তো ১৯৫৬ সালে "Autonomia" পুরস্কার লাভ করেন । পরের বছর World Youth Festival - এ তিনি শ্রেষ্ঠ তরুণ কবির পুরস্কার পান ।

নির্বাসন শেষে ১৯৬৪ সালে তিনি নিজ দেশে ফেরেন এবং Teatro Experimental de la Municipalidad নামে একটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৬৫ সালে গুয়াতেমালান সরকার তাকে পুনরায় নির্বাসনে পাঠায় । ১৯৬৬ সালে তিনি গুয়াতেমালায় ফিরে আসেন এবং F.A.R. (Armed Revolutionary Front) এ যোগ দেন । ১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে ওত্তো তার গেরিলা গ্রুপ সমেত বন্দী হন । ১৯ মার্চ ১৯৬৭ তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় ।]

রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১০

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (ছয়)

রীতু শোন বলি
এসব রাত কত বিচ্ছিরি
বুকের প্রচুর নীচে অর্থহীন আঁধার
ট্রাম্পেট করে
দু'হাত ভরে তুলে আনি
গমকে ওঠা কান্নার ফেনা
শোনই না রীতু
এসব রাত বড় চুপচাপ
এমন তুমুল সব ব্যথায় ঝুপ করে পড়ে
হাত-পা ছুঁড়তে থাকি আনাড়ির মতন
অন্তর্গত সংগ্রামে
বিপুল উদ্যমে
দেহের বন্দর বাঁকাতে বাঁকাতে
একবার দেখোই না রীতু
হয়ে গেছি কেমন কাঙাল
কেমন পতিত নিথর
কে বোঝাবে কাকে
এক জন্মের হিসেব তো নয়
এতবার পাশ ফিরে
পাশবালিশের ওপারে
কেবল এক অনস্তিত্বের পরিশ্রুত মায়া
দেখোই না রীতু
কতটা সাদা এই যন্ত্রণা
কতটা পাগল হবে একাকী মানুষ
কতটা পাগল হবে বিবাগী মানুষ

________________________
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ছ ছ'টা জিজ্ঞাসা

ক'ফোঁটা শিশির পেলে ঝুঁকে পড়ে দীর্ঘ ঘাস
কতখানি রোদ শুষে সোমত্ত সূর্যমূখী
কারা কারা হেঁটে গেল পর্দা টানে বুক
কেমন বিকেল এলে তুমুল ছটফট
ক'বেলা না খেতে পেলে মানুষ কুকুর হয়
ক'বিন্দু বিষাদ বুকে কবি হয় বারোয়ারি মন ।।

______________________
১১ সেপ্টেম্বর ২০১০

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

আরোহী

একটাই পথ
ভীষণ ঠান্ডায় যাতে
আঙুলে আঁকড়ে উঠেছি বহু মাইল,
অপ্রাসঙ্গিক যত বিষাদ টিনের বাকশে
ফার্মেন্টেড মাছের মত বিদ্যমান,
যা কিছু নখ সেতো ভেঙ্গেছে - উঠেছে
সেই কবে, হারিয়ে যাওয়া শ্বাসের বাতাসের সাথে,
পুরু চামড়ার নীচে তরল বিষ বাড়তি
প্রয়োজনে জন্তু হই...

থ্যাঁতলানো নাক আর তোবড়ানো গালের দিব্যি
যে কোন ধরণের মাংসকেই প্রাধান্য দিই ।।


০২ সেপ্টেম্বর ২০১০

সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০১০

পল্টনে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ মিনিট

সবাই ভুল বকেছে ওদের চেয়ে নেয়া জলের পাইপে ভাগ বসিয়ে
নিদেনপক্ষে বড় দালানের গায়ে রোদের দাগগুলোকে মিলিয়ে যেতে দেখত
আমাদের লোকদেখানো হাতে-হাত দেখছিল রোগা দেয়ালগুলো
এক মরা পাগল হাঁ করে মাছি পালছিল আর ফ্যালফ্যাল দেখছিল সিমেন্টের খুঁটি
এক বুড়োমতন লোক পথ গুলিয়ে ঘুরছিল পল্টনের মোড়ে আর
পুলিশও বাথরুম সামলাতে পারেনি, শহরের সব নর্দমায় উৎকট অসভ্যতা
বাচ্চাটা বাসচাপা পড়ে কাতরাতে কাতরাতে রক্তের মধ্যে পিছলে ওখানেই ছিল
আর সব ভদ্রবৃন্দ নাকে রুমাল চেপে দ্রুত সরে পড়ছিল,
শেষে এক রিকশামানুষ টেনে ধরে তুলল আর দেখল বাচ্চাটা মানুষের,
প্যান্টের জিপার তুলে দুটো পুলিশ তাকে টেনে তুলে চড় কষাল
কিছু দুর্দান্ত লোক রিকশা ভেঙ্গে দিল আর মারতে লাগল
রিকশামানুষ মরেনি শুধু হাজত খেটেছিল আর দু'বেলা গন্ধরুটি খেত,
বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে ভিজে বাসে চেপেছি আর বাড়ি গেছি
সেলফোনের ভেতর পানি ঢুকে ওটা বন্ধ হয়ে গেছিল ।।

মাংসের বাজারে সুখ-দুঃখ

দরজার ছিটকিনি লাগাতে লাগাতে দেখি নখগুলো
আগেরবেলার তরকারীগুলোর অতিরিক্ত হলুদ তা লেগে এখনও
নিজের সামনে উন্মুক্ত উপুড় এবার মাংস ঘষে ঘষে
বের করে নেব কয়েক ছলক ভালবাসা,
বিদ্যুত যাবে নিশ্চিত আর প্রচুর ঘামে গাঢ়তর নিঃশ্বাস
হলুদ অথচ কার্যকরী আঙুলে গড়া হাত এবং তালু
এরাই অধিক ঘনিষ্ট এ মুহূর্তে,

তিন-চার-পাঁচ বড়জোর তারপর
ছলকে ছলকে ভালবাসার ফোঁটাগুলো বেরিয়ে
ঘামে নেতিয়ে হাড়-মাংস-মাথা
নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে কার্যকরী বিনোদনে
গাঢ় উচ্চারণে শুভ সমাপ্তির পর দুপুর-বিকেল-রাত
বেছে বেছে বিভিন্ন জল এবং মাংসল উরু
স্যাঁতস্যাঁতে দুঃখকে ঘিরে ঘেমে ওঠা সুখ
সবশেষে মনখারাপ এবং সেলফোন
আবার মনখারাপ এবং সেলফোন,

মাংসের বাজারে সুখ-দুঃখ মানে বাজেকথা
মন নিষিদ্ধ এবং নিখোঁজ
ওষুধ আম আর আড়ং দুধ একে অপরে তবু
বেছে বেছে রাতে, প্রভাতে
তুমুল উলঙ্গ ক্ষুধায় ।।
_______________
২৩ আগস্ট ২০১০

বোটানিক্যাল গার্ডেন (৩রা আগস্ট ২০১০)

উল্লম্ব মানব বসতি পেরুতেই আবছা গন্তব্য জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
মানবসৃষ্ট তবু বৃক্ষের সমাজ যেখানে বিলোয় প্রচুর হাওয়া
কথা বলে বা তাঁদের সাথে কথা বরার ভান করেও
কয়েক পোঁটা তৃপ্তি, মানুষ গন্তব্য নিয়ে বড্ড বেশি ভাবে ।

বুনোলতার ঘ্রাণ ছিল, পায়ের পাতায় পুরু ঘাস,
জিন্সে লেগে থাকা চোরকাঁটা, আরো কিছু, সব কিছু
জুটি, ঠগ, ক্লান্তিকর সাইনবোর্ড, লম্বাপথের ক্লান্তি
তবু বিশুদ্ধ শান্তি ইটের উপর, অব্যবহৃত সিঁড়িতে
উঁচু-নীচু, পিচ্ছিল, লালমাটির কাদা,
বুঝতে চেয়েছি প্রকৃত পাহাড়
পাহাড়ের ডাক ।

মাইলকয়েক হেঁটে জমানো ক্ষিধে, জলতেষ্টা আর ক্লান্তি
তবু গাছ, ঝোপ, কাঁটাগাছ, লতা আর মানুষ
ক্লান্ত, নবীন, চতুর, সুযোগসন্ধানী, নেশাগ্রস্ত
আর বড় বেশি লোক-দেখানো প্রেম ।

গাছ, ঘাস, জল, কাদা
ঝোপ, লতা, কাঁটাগাছ - ভাল থাকুক ।

জৈবিক দেহটাই আজন্ম পাপ, দেনা, অভিশাপ
মাংসের বন্দীশালার প্রাচীর ভেঙে ঠিক একদিন.. একদিন...

মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০১০

জল জল বিন্দু জল

এই লম্বা মেঘ আর নীচুতে আকাশ স্বচ্ছ
সরু ঘাসের আড়াল সম্ভব ছায়ালীন
কাঁচগুড়ো কাঠফুল, সাধারণ শিশির রোদপানে টইটম্বুর
ভেলার কাল চেরিরডাল দেয়াল
অতিস্বচ্ছ জল হ্রদ গায়ে পানিশাক
অনেক তলায় শ্যাওলা সুগোল
ক্ষুদ্রতম মাছ খাবে সারাক্ষণ,

মেঘ এলে চুপ
চুপচুপে সাজে বৃষ্টির জলে
না হলে দুঃখ পাবে আসবেনা মেঘ আর
জল জল বিন্দু জল

ব্যবহৃত লম্পটের মধ্যম আঙুল


কারা সোমত্ত মেয়েমানুষ লম্বা ছায়াশরীরে গন্তব্য তীব্র অন্ধকার, জীবিত অথবা মৃত
গলে যাওয়া বুকের কাঠামো ঝুলতে ঝুলতে বিষাক্ত কারো হাত দানবীয় হাড় যথার্থই
উপযুক্ত বিষাদের দাঁড়ি কমা, বিশিষ্ট শুয়োরদিগের ব্যবহৃত রুমাল আর ইস্ত্রীর ব্যবহার
প্রচুর স্তনে কামড় বিষসভ্য নিয়োজিত মাতাল, জীর্ণ বানানের আবশ্যিক সাবান সংক্ষিপ্ত বিন্দু

সেলুনের নোংরা চুল অবশিষ্ট কলা আর ধুলোশিশুদের দাঁত, কাদার বিবর্ধন আভ্যন্তরীণ
ভেতরে ফ্রেমের পুরনো ছটফটে দুমড়ে মুচড়ে আছড়ে জ্বলজ্বলে চোখ লেন্সে ঘোলাটে
দাগকাটা পথ নিয়ে সোজা দৌড় আসে, বৃদ্ধ ডাকপিওন বস্ত্র বিষয়ক অর্থবিযুক্ত বাতুলতা
শরীরের ভীষণ লম্পট আলজিবে স্বাদের অতিরিক্ত ঝাল চেখে নমনীয় হয় মাংস সমেত ।।

বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০১০

কথনঃ ৪ আগস্ট ২০১০

সে ছিল আর তার ব্যক্তিগত প্রসারিত ডানা
দূরবর্তী জগতের স্বচ্ছ মেঘ
থেমে যাওয়া চিৎকারের বোনা দুঃখ
চেপে থাকা শীতল বসবাসের ব্যবহৃত ফাগুন
চলচ্চিত্রময় শব্দ চলমান গৃহ জাগতিকে
হার না মানা প্রানের স্পন্দন বৈষয়িক স্বীকৃতিতে
সংক্ষিপ্ত জলের ফোঁটার ছিপছিপে কথা
বিখন্ড কালোর শরীর ক্ষীণ আলোক রেখা
বিদ্রোহের প্রতিশব্দে পরিচিত রঙের সম্মেলন
কেউ থাকে ভুল বাঁচে নিঃশব্দ ম্যানিকুইন
কেউবা টিকতে টিকতে লিখে রাখে শব্দ সর্বশেষ
ধুলো সব জমেনি শেষমেষ
তাই সংসার হেঁটে যাবে পরিত্যক্ত পথে কড় গুণে গুণে ।

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০১০

উত্তরসূরীর প্রতি

আমার সর্বশেষ শব্দগুলো হাতে নাও ধরে দেখো
প্রাসাদ ছাড়িয়ে দূরে এই পুরাতন মৃত বৃক্ষ
এর নীচে ছিলাম, পরিত্যক্ত প্রাচীর ডিঙিয়ে
চলে যাও এক্ষুণি দূরে, তবু ধরে রাখো কিছুকাল
প্রাথমিক সৈকত তোমার, আর প্রতিটি বালির পৃথক অস্তিত্ব
ডানাভাঙ্গা গাংচিল চিৎকার, সামুদ্রিক ঝড়
এদিকে তাকাও, এই আমি নিবিড় ছিলাম
এই পথে একেবারে চলে যাও, শুধু ধরে রাখ আরো কিছুক্ষণ
আমি বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাই, শুয়ে পড়ি মাইলের পর মাইল
পথদের বলে যাও ভুলে যাবে, না ফেরা পথের মানচিত্রে
এই ভীষণ আপন ঘাসজীবী পুরাণ পাথরের পর
ডাল-রুটি খেয়ে বাঁচা নগণ্য মানুষগুলো
একবার ছুঁয়ে নাও তারপর ছুঁড়ে ফেলো
ক্রমশ আসে মৃত মানুষের সারি তারপর
এখানে নয়, ফেলে যাও কোন ঘাস সমৃদ্ধ প্রান্তরে
আর বুকে করে নাও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভালবাসা
শুভকামনা, ঠিকমতো বাঁচো, বাঁচতে দিও ।।

২৯ জুলাই ২০১০

ত্রিভুজ

একটা চোখ
কতটুকু ভুল কতটা বানানো
অব্যবহৃত বোতামের ভীড়
সবার কেবল বরফ কেনার তাগিদ
তাড়া করেছি জন্ম - জন্মান্তরে
ঠিকানা পাইনি, কিছুতেই হয়নি কিছু...

এ কি নিকট না দূর অসংখ্য মাইল
গত জন্মে ছিল কী না
অথবা পৌঁছে যাব আগামী হাজার জন্মে
ঘাস নেই, ভয়ানক সব বুকের এক প্রশস্ত ক্ষত...

ছেঁড়া পকেট পুরনো ডায়েরি
কে বেশি ছন্নছাড়া
নাকি মিলেমিশে মাখে
একসাথে সুর্যাস্তে থাকে

ছিপছিপে মাছরাঙা ছিলাম
হচ্ছি ত্রিভুজ
হচ্ছি .. হতে হতে পুড়ে যাচ্ছি
জ্বলে যাচ্ছে আঙ্গুল ।।

বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০১০

কথনঃ ২৮ জুলাই ২০১০

থাকি
আবার থাকি না কখনও
দূরে না
আবার জড়াই না বুকে

বিপদের ঝোলে নানরুটি ভরি নিজস্ব পেটে
আছড়ে ভাঙ্গি শরীর অসুখ
গিলতে গিলতে বাদশাহী ফিরনি
অসংখ্য এঁটো থালা
গায়ের গন্ধে
হাড়ের শব্দ শুনি
আঙ্গুলের কড় গুনি

মাঝদিনে ধুতে দিই গা
যাই না আবার
চলে যাই
একেবারে ।।

শারীরিক সেলাই

শরীরের প্রচুর কাছে
একটি জামার নতুন বোতাম
কেটে কেটে কারচুপি কারসাজি
কালো খয়েরী.. যাচ্ছে
যাবে....

বুকের কাছটা কেটে পাশে টেনে বসিয়ে
এবার আর সুতো ভরোনা
উল্টোপাশ সরিয়ে, আবার -
গুলিয়ে ফেলছ,
ওটা পুরনো
নতুনটা খামছে ধরো,
সবাই কাটছে জুড়ছে
উরুতে, হাঁটুতে, পায়ের পাতাতে,
চামড়াতে অন্তবর্তী সম্ভোগে
তরুণী কিংবা বৃদ্ধা রমণী
আঁটসাঁট...
এবার কেটে ফেল
ছিঁড়ে ফেল,

আর টেনোনা
ছুঁড়ে ফেলে দাও দূরে,
অথবা নিজস্ব অধিক কাছে ।।

২৮ জুলাই ২০১০

শীত ... তুষারমোরগ ... মাদী নেকড়ে

... ভয়ংকর শীত ..
এক তুষারমোরগের মাথা উঁচু পেরুল বরফের চাঁই
... এক ... পৌনে এক ... আধা ... শূন্য ...
... এক মাদী নেকড়ে ...
... কুৎসিত বাচ্চাগুলো না খেতে পেয়ে ... মারা পরত তাই ..
... আধা ... দেড় ... পৌনে দুই ...
তুষারমোরগের উরুর হাড়ে মাংসে ...
... ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাঁতের দাগে ...
... চলমান শীত ... শ্যাওলার ঘন সবুজ ...
তুষারমুরগি, এবার পালা তোর...
... চিৎকার করে ডেকে পার হ বরফের চাঁই ...
... আধা ... এক ... দুই ...

২৮ জুলাই ২০১০

রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০১০

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (চার)

জানলায় না দাঁড়িয়েও তুই বাঁচিস
আর তোর মনও খুব ভাল থাকে,
তুই তো জানবিও না কোনদিন
রাত আটটার ঝুমবৃষ্টির গল্পগুলো...
আমি কার জন্য ভিজেছি ছাতা গুটিয়ে,

দাঁড়াস না কোনদিন জানলায়
শুধু কাঙালের মতন তোর ছায়ার অবয়ব
খুঁজি জানলার নতুন পর্দায়,
কেবল কল্পনায় বসিয়েছি তোকে গাঢ় করে...

সচেতন মস্তিষ্কে মুছে দিতে পেরেছিস
বেশ তো ব্যক্তিগত পৃষ্ঠার পুরুত্ব,
আমিই কেবল হাইওয়ের উপর দু'হাত তুলে
কত অপরিচিতের গায়ের ঘ্রাণে -
তোর মৃত্যুময় ঘ্রাণ খুঁজি ।।

শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০১০

আধুনিক আবর্জনায় সমৃদ্ধ জুতোর তলা (চতুর্থ পর্ব)

নিরেট ধোঁয়ায় বসে কেউ খাবে সুখ, আর একমনে হেঁটে যাবে যারা বোকা গোবেচারা । যারা ঘুম থেকে হাতে করে স্বপ্ন নিয়ে ওঠে, পথের ধারে ঘুমাতে গিয়ে ভাবেনা । অথবা যারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিছানায় শোয়, তাদের ঘুম কতটা !

মাটিতে বসেই খাওয়া যায়, তবে বহুমূল্য ডাইনিং টেবিল, তাতে কত বাড়ে খাদ্যগুণ ! কারা খায়, কাদের খেতে হয়, আর কারা খাবেনা, ছড়াবে ! একমাত্র ফুলকে ছিঁড়ে গাছকে নিঃস্ব করে যাবে, তারপর পায়ে মাড়াবে ! আর মরে যাবে
বারবার ।

২২ জুলাই ২০১০

বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০১০

সম্পৃক্ত সবুজের অবসন্ন মানুষ

হয়তোবা রোদ জল এমনকী হাওয়াও
ক্ষুধার্ত যারা জীব অর্থ হীন অর্থহীন
অগণন জলের রোদ প্রহারে
সাম্রাজ্যবাদীর চর্বির বিস্তারে
জিরজিরে হাড়ে অসংখ্য উঁচু
উল্লম্ব ঘুম
তার থেকে জন্মানো অদৃশ্য বাসা
রেখার পাথরে শখের সুখ
গ্রীবা আর উরুর আন্তঃদেহ ক্রীড়া
হাত পেতে অজস্র চাহিদায়
বাণিজ্যিক জলে গ্লানির অধঃক্ষেপ
সুখ আর ভালবাসা
মূদ্রার উল্টোপিঠে ।।

২২ জুলাই ২০১০

শনিবার, ১০ জুলাই, ২০১০

অসুখ - ০৭

ভরা চাঁদ হেলতে হেলতে গায়েব
নীল-হলুদ ডোরাকাটা বাড়ির আড়ালে
বিছানায় চিত শুয়ে নিজেকে যতটা আঁকড়ে পারি
পাই পাই শুধে যাই যাবতীয় স্বপ্নদেনা
পাশে শুয়ে বেজন্মা অন্ধকার
নষ্ট নৈঃশব্দে অপরিশোধিত অস্থির প্রবঞ্চনা
রাত বেশ ছিল, অযথাই সকাল এসে যাবে
রোদে পুড়বে বারান্দা, ঘরদোড়

চোখ মেললে দূরে সভ্যতার সপ্তম তলা
বহু নীচে সামান্য মানুষ যারা আজীবন উদোম পিঠে
রোদ শুষে বুকে শূন্যতা পোষে
দ্রষ্টব্য দূষিত বৃষ্টি, কারখানা-নদী যৌথ মিথস্ক্রিয়া
টেম্পো-বাসের জট ঠেলে হেঁটে যাওয়া মানুষ
শুকনো রক্তের মত ইট দিয়ে গড়া দালান
উপরতলার বিলাসিতার দায়ভার বয়ে যায়
আজন্ম দাগ মুছে যায় ছোটলোকবৃন্দ
আর আমি আছি নিজের জন্য অপেক্ষায়
কতটা হাস্যকর, ভাবা যায় ।।

০৭ জুলাই, ২০১০

অভ্যস্ত ছিল এতকাল সমগ্র শহর

অভ্যস্ত ছিল এতকাল সমগ্র শহর
যখন প্রতিটি বারান্দায় ওড়ে তোমার সালোয়ার,
দেখতে হুবহু এক কিছু পোস্টার সাঁটা উরুতে আমার
ধুলো পথ হেঁটে হেঁটে উঠে আছে সুউচ্চ পাহাড় পিঠ বরাবর
ঘষে ঘষে মুছে ফেলা অপরূপ সব সাগর বন্দর
গায়ে জঘন্যতম পোষাক তোমার প্রতিপক্ষর
পৃথিবীর যাবতীয় শপিংমল কেননা তোমার
যেসব পিঁপড়ে হানে কামড় সবচে' বিষধর
ওরা থাকুক শুয়ে তোমার স্যান্ডউইচ জুড়ে
সময় সুযোগ বুঝে খাওয়ানো যাবে তা
সমস্ত বারান্দা হতে ছুঁড়ে ফেলা হবে তোমার সালোয়ারগুলো
সেসব কুচি কুচি'র সুবিধার্থে পোষা হবে স্বাস্থ্যবান সব ইঁদুর ।।


০৬ জুলাই ২০১০

কথনঃ ০৬ জুলাই ২০১০

রিকশা আসুক
কাকরা ডাকুক
শুদ্ধ পাগল হাসতে থাকুক
বেগুন ডিম আর কলার আড়াল এক কিশোরী অংক কষুক
পাশের ফ্লাটে রান্নাঘরে প্রেশার কুকার ডেকেই চলুক
নিধু চিঠি নাইবা পাঠাক চিঠিওলা তবুও আসুক
কড়া রোদে আমের আচার শুকিয়ে যায়
রূপোলী রং পাতিলঅলা রূপোর পাতিল করুক ফেরি
জানলাধারে হঠাৎ দেখি জুতো যাচ্ছে চুরি
বিদ্যুতঅলার সূক্ষ্ম শিস্ এ যাচ্ছে দুলে হৃষ্টপুষ্ট ইস্মাতারা
তারস্বরে শিশু কাঁদুক
ছাদের গায়ে শালিক বসুক ছায়া মেলে
শাড়িওলা শাড়ি বেচুক সুর করে টেনে টেনে
লাল পর্দার আড়াল ছিঁড়ে দু'জোড়া পা আনুভূমিক জড়িয়ে থাকে
ক্ষুদ্র বালক খাচ্ছে গালি
উটকো দু'লোক জঘন্য আর নগণ্যতে মারামারি
একটি মানুষ গীটার বাজায় চারটে কিশোর ভীড় করে খায়
হতচ্ছাড়া কোন এক বালক নখ কামড়ায়
খাতার মধ্যে শব্দ বসায় ।।

রবিবার, ২৭ জুন, ২০১০

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (তিন)

গোসলের ঘরে শাওয়ার ছেড়ে দিলে সরু জলের ভেতরে তুই কেন নেই
ভীষণ গরমে ঘামের মধ্যেও নেই
তুই মূলতঃ নেই রে... তুই নেই
তুই থাকবি ভেবে হেঁটেছি.. তুই বলিসওনি ভুলে কখনও
বড় রাস্তার সবচে' বড় খুঁটিকে জাপটে ধরে বলি
তুই নেই রে.. তুই নেই.. তুই নেই...

বালিশ জাপটে ধরে নদী হয়
এরপরও তুই নেই... নেই...

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (দুই)

দ্যাখ দ্যাখ... মন দিয়ে দ্যাখ... মেপে কাটা সুতো, কড়ই কিংবা বেতসের সুবাস, কড়ি দিয়ে কেনা যায়নি বিরিশিরির ঝিরিঝিরি, ছেলেবেলা .. প্রকট উড়িয়ে ধুলো আসে, আসে সোমত্ত নসিমন, তোর আর আমার আঁচড়ানো চুলে গাঢ় রোদের গন্ধ, সে কার গল্প বল ? কে কার কথার অপেক্ষায় থাকে ? বিনুনীতে গাঁথে
অভিমান, ভাল ভাল ভালবাসা স্পষ্ট দাগে নষ্ট করে,... কে ? তুই আর আমি আর ....


তুই তো বুঝিসনি, তোর বুকে হাত দিয়ে সেকী অসুখ, বাড়ি গেছিলাম, ম'রে গেছিলাম হয়তোবা, মা টেনে টেনে গোসলে ঢোকাল, আমি চুপসে একপাশে ঘষে ঘষে তুললাম ভালবাসা, কিছু সামান্য সুখ বেরোল, ঐ অনেকটা অমন, যেমনটা দিয়েছিলি.. বারণ করেছিলি বলতে, বলবনা, ভগবানও জানবেনা, এই যা বেরিয়ে গেল হাওয়া...


ভুলেই গেছিলি, বাজে বুঝে মনে দিলাম নাড়া, ছোঁক ছোঁক করি আজও, চিনিনি চিনিনি.. শরীর বুঝিনি আজও, বিড়িটাই খেতে পারিনা ঠিক করে, একবার এক প্রেমিকার ঠোঁটে এই একদলা ধুলো, এমা, ছি,...


কেমন সুখ দিয়েছিলি.. ভাল্লাগেনা কিছু আর ...

২৭ জুন ২০১০

শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০১০

ইটের কুচির ফাঁকে ঘুমন্ত মানুষের বাচ্চা


প্রকৃত গণিত থাকে বুকের পাঁজরে
খাদ্য মেলে ভিক্ষে, ধিক্কার, প্রহারে -
গায়ের জমিনে চলে ধুলোর শাসন
জন্ম অভিশাপ আঁকা ছিন্ন বসন;
উকুনের জমিদারী চুলের শেকড়ে
আঙ্গুলের গায়ে ঘাঁ-রা গলাগলি ধরে,
অসুখ-বিসুখ এলে ঈশ্বর সহায়
সভ্য শহরে ওরা দারিদ্র্য কুড়ায়;
মন বলে অবশেষ কিছু তো থাকেনা আর
ইটের কুচির ফাঁকে ঘুমন্ত মানুষের বাচ্চার ।।


২৩ জুন ২০১০

অসুখ - ০৬


বুকের অভ্যন্তর, সহস্র স্বপ্নের গলিত শরীর
একাকার, বৈষয়িকতা বিপন্ন অসহায়
পঙ্গু জৈবিকতার দীর্ঘ নগ্ন চুল, কাব্যহীন
অবমাননার উগ্র আঘাতে, বিলুপ্তপ্রায়
ভংগুর বক্ষবেষ্টনী,
নখের আড়ালে মাংসের আদিম চিৎকার
হাঁটুর টিলায় ছোপ ছোপ কালচে উপন্যাস
ছানিপড়া অস্বচ্ছ চোখ, একা
মন এবং মগজের নৈর্ব্যক্তিক স্থিতিশীলতা
অথবা বিদ্যমান, বিশুদ্ধ শূন্যস্থান
নিদ্রাহীনতা কিংবা নিদ্রস্থুলতায়
মন - শরীর দু'ভাবেই মানুষ একা ।।


১৬ জুন ২০১০

দেহজ ক্ষুধা


ঘি-গন্ধী দেহ কাঁপে দাহ্য আনুকূল্যে
শরীরের কারুকাজে মাংসের বাহুল্যে,
অনার্য যুবতী মাতে শরীর বিজ্ঞাপনে
কামুক চোয়াল জ্বলে আদিম আস্ফালনে;
দাঁতাল পুরুষ খোঁজে শাঁসাল শরীর
নখের আয়ত্ত্বে বাড়ে ক্ষুধা সুগভীর,
সহবাসে সর্বদাই পুরুষশ্রেণী বন্য
স্থুল সুখে সিক্ত থাকে জৈবিক অরণ্য;
সভ্যতায় বরাবরই সোঁদাগন্ধী বাঁধা
ভাতের ক্ষুধার পাশে দেহজ ক্ষুধা ।।

রীতু :: প্রত্যাবর্তন


আমারও দিন গেছে, রাত গেছে
বিনিদ্র, দেহাতি বাজারে
গেছে অঘ্রাণ, পউষ আর শ্রাবণের মাস
আমিও নিয়েছি নোনাস্বাদ...
আমিও পেয়েছি
নিষিদ্ধ বর্ণ-গন্ধ
আমার প্রতীক্ষার হরিদ্রাকাল
সোনালী হয়নি
আসেনি আর মধুমাস
সে আমার জন্য নয় কোন জন্মেই...

আসবেনা মধুমাস....

ভুলে যাওয়া সুখ, ভুলে ভরা রাস্তা


ভুলে যাওয়া সুখ
ভুলে ভরা রাস্তা
ভুলে থাকা মুখ
ঘুণে ধরা ব্যবসা

চেনা চেনা
আলো আশা
পথে বোনা
স্বপ্ন বাসা

এখানে ওখানে পথশিশু শুয়ে স্বপ্ন খেলছে ধুলোয়
রিক্সাওলার পায়ের পেশীটা অল্প একটু জিরোয়
ভিখিরী বুড়োটা জানেনা এখনও খাদ্য জুটবে কখন
ওদিনে বিজ্ঞাপনের ভীড়েতে বিক্রি হচ্ছে জীবন

থেমে যে যায়
রোদের রেখা
ধুলোর গায়ে
জীবন আঁকা

দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দ্রব্যমূল্য বাড়ে
দিনমজুরের ঘাম বৃথা যায় রাজনীতিকের ঝাড়ে
এঘর - ওঘর, শতঘর পোড়ে সভ্যতার-ই আঁচে
গার্মেন্টস ভাঙে গার্মেন্টস পোড়ে তবুও তো ওরা বাঁচে

কত ফিরিওলা এল গেল এই দিনবদলের হাটে
কত দিপালীর বুকের স্বপ্ন দারিদ্র্য এসে কাটে
সভ্য হয়েছে মানুষ কতই সভ্য হচ্ছে আরো
সব মিছে আর ভাঁওতাবাজি, সভ্যতা নয় কারো

তবুও মোরা
বেঁচে থাকি
মেঘের ফাঁকে
আকাশ দেখি

_____________
২৩ জুন ২০১০

বুধবার, ১৬ জুন, ২০১০

সময়ের প্রকৃত স্বাক্ষর


জল পোড়ে জলের গভীরে
দূরবর্তী মেঘ যায় দূর হতে দূরে
বালির শরীরে লেখা নদীর আবাদ
বিচ্ছিন্ন আকাশ গায় একা আর্তনাদ
প্রতারিত বকপাখি পুনরায় বাসা বোনে,
প্রতিদৃশ্যের নগ্ন ব্যবচ্ছেদে
ভোরের নবীন পৃষ্ঠায় দৃশ্যেরা মাতে
অনন্য বক্রতায় অস্তিত্ব বিস্তারিত
সীমিত আয়তনে স্বপ্নের প্রবন্ধ
যান্ত্রিক গুঞ্জন আর প্রাকৃতধ্বনির অসম্পৃক্ত দ্রবণে,
সভ্যতার অস্পষ্ট সিঁথিতে
নিতান্ত মানুষ মগ্ন গোলকের দ্রুতিতে
অধিক ঘুমন্ত মন গাঢ় গম্ভীর
ক্রয় আর বিক্রয়ের ফর্দে স্থবির
স্বল্পবসনা কৌতুকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিবেদনে,
মাংস রক্ত দাঁতে
ব্যবহৃত দেহ সিক্ত প্রাচীন বৃষ্টিপাতে
রূপকথা কমে প্রতিদিন
অন্ধধর্মে মানুষ বিলীন
সময়ের প্রকৃত স্বাক্ষর বর্গক্ষেত্র মনে ।।


১৬ জুন ২০১০

মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০১০

টিকে থাকা শরীর বিশেষ


গভীর কোন রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
আকাশ দেখা ছাড়া
কোন বিনোদন নেই আর
আমরা যারা শরীর বেচি,
কত লোকজন পথে-ঘাটে বাজারে
আমরা গুণিনা, ওরা আমাদের গুণে যায়
আঙ্গুলের করে রাখা ব্যথার মুনাফা
আমরা যারা শরীর বেচে বিষ কিনি;
বাঁচার আকুতি আদিম
তাই উগরে দিই সুখ, লোকজন খায়
গায়ে পাপ ভেতরে অসুখ,
হেঁটে গেলে লজ্জায় পথ বিব্রত নিজেই
আমরা না হলে পৃথিবী হত
হয়ত আরো খানিক সুন্দর,
জন্মে গিয়েই অনন্য এক ভুল
আজন্ম খেয়েই যাচ্ছি কেবল
ফুরিয়ে যাচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাস,
আর যেসব বৃক্ষ সবুজ শরীর
অকারণে মৃত, তাদের অবশিষ্ট হাড়ে
আকুল প্রলয় বাঁধে প্রজন্মের ছত্রাক,
আরো কতকাল বেচে যাব শরীর
আর কিনে খাব পুরাতন বিষ;
ঝিঁ-ঝিঁ ঘোষিত রাত
পাশাপাশি নিয়ন আলোর প্রতিবাদ,
কেউ তো থাকেনা, খবর রাখেনা
কেন দেবনা বুক
নতজানু হব স্বল্পমূল্যে
টুটিচাপা মন, টিকে থাকা শরীর বিশেষ ।।


(১৫ জুন, ২০১০)

শনিবার, ১২ জুন, ২০১০

প্রাথমিক নাগরিক বিজ্ঞান - ০১


সুখ কি
দুঃখই বা কি
কতটুকু বুঝি তার, কতটুকু ভান
রক্তে-ঘামে বৃত্ত আঁকে সহস্র সন্তান,
জিতে গেলে একজন হারে অন্যজন
ভীষণ নাগরিক যুদ্ধে ক্ষমতা প্রদর্শন
কেবল অসহায়ত্বে দুর্বলের-দরিদ্রের,
খাদ্যে অলঙ্করণ বেশি, পাশাপাশি
স্বল্পমূল্যে নিয়মিত ভর পরিমাপ;

সেইসব ক্ষমা, যা শুধুই সহজলভ্য ভিক্ষুকের হাতে
সেইসমস্ত আশা, যা বিদ্যমান জ্যোতিষীর অতশীতে
তীব্র আন্দোলন, যা দানা বাঁধে রিকশায় - মিনিবাসে
খুচরো পয়সার আক্রোশে যথারীতি
স্টিয়ারিং হুইল অপেক্ষা হর্ণের উপযোগিতা বেশি,
পুঁথিগত অন্ধ চেতনারা স্থূল সাজপোশাকে পুঁথিতেই পচনশীল
সহাবস্থানের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে প্রযুক্তি আর মানবতা
এক অন্যকে কষে লাগাচ্ছে চড়, অকারণে;

বিরহ-মিলনের প্রকৃত বিভেদ
বোঝাবে কে, কাকে
প্রাপ্তি দূরবর্তী, ভালবাসার যোগ্যতাই কে রাখে !
কষ্টের খুব কাছে এক বিন্দু ভালবাসা
জমে থাকে, কোন ভরসায় !!


(১২ জুন ২০১০)

শুক্রবার, ১১ জুন, ২০১০

অসুখ - ০৫ (১১ জুন ২০১০)


ছোপ ছোপ ঘাস ঝোপ সরু মেঘে বেমানান জল
ইট-বালু-কন্ক্রিট ঘুরপথে মৃতকাক কুকুরেরা চঞ্চল
নানা সুখে হাসিমুখে উড়োচিঠি অশ্রুতে অভিমান খয়েরী
মিনিবাসে সিগেরেটে পুরাতন পোষাপাখি ভুলে যাওয়া ডায়েরী
চকোলেট মিহিদানা মিল্কশেক দাঁড়িটানা ছেঁড়া জুতো
শেষছড়া চেনাগানে নবনীত ব্যাকরণে সুধীজন ছাইছুতো
প্রুশিয়ান ঈশ্বরী নতজানু অবতার নীরবতা কামনার
আলগোছে লাল বলে মৃত্যুর স্বচ্ছতা শূন্যতা সংসার
চড়াইয়ের ঘুলঘুলি বুনুনীতে হাতঘড়ি নীল কাটে উড়োযান
সরকারী অভিশাপ পথঘাট খালময় ঘুড়ি খোঁজে পরিত্রাণ ।।

বুধবার, ৯ জুন, ২০১০

একটি মাইক্রোস্কোপিক টেডিবিয়ার চাই


আকাশ একটি নীল মলাটের নাম
এই ইতিহাস মেয়েটির ছিল জানা,
বৃষ্টি মানেই আকুল কান্না কোন
মেয়েটি সেও বুঝে গেছে এতদিনে,
জানতে জানতে বুঝতে বুঝতে
বিষাদের প্রেষণায় চুপসে
মেয়েটি হয়েছে ক্ষুদ্র, এত্তটুকু;

ভয়ানক এই ক্ষুদ্র মেয়েটি
যায় চলে যায়,
উথাল-পাথাল কষ্টে দুলে
মেঘের ছায়ায় একটু দাঁড়ায়,
জাপটে ধরে কাঁদার জন্য
এই মুহূর্তে
তার প্রয়োজন
একটি মাইক্রোস্কোপিক টেডিবিয়ার ।।

শুক্রবার, ৪ জুন, ২০১০

অবশিষ্ট হাড় - ০৫ (০৩ মে ২০১০)


মস্তিষ্কের কোথাও না কোথাও আবেগ থাকে
আর থাকে বৈষয়িকতা, তাদের মাঝামঝি কোনমতে টিকে থাকে ভালবাসা
বিমানের পর্যাবৃত্ত ঐকতানে কেঁপে ওঠে আকাশ,
বৃষ্টি হবে, হবে না, হয় না, এলোমেলো গল্পরা বাঁধবেনা উপন্যাস
মানুষের পচনশীল সভ্যতায় সংবেদনশীলতার নিখোঁজ সংবাদ
বাণিজ্যিক কবিতার নীচে চাপা পড়া সৃজনশীলতার গলিত লাশ;
নগরীর দূষিত নদীসমূহ অমৃতবিহীন মৃত-প্রায়,
নেহাত বৃষ্টিতেই শহর সাজে হঠাৎ ভুল ক'রে, ভুল ভাবে
নাগরিক চড়ুইবৃন্দ, যাঁরা সভ্য মানুষের পাশাপাশি বিদ্যমান
তাঁদের ঠোটময় উড়তে থাকা সামান্য খড়, বাসা বুনবার;
মানুষ প্রয়োজনে পাল্টায় ঠিকানা, পাল্টায় জীবন-ধরণ
ভোগবাদের মশলাযুক্ত খেলায় জৈবিকতার স্থূল আস্ফালন
পুরু বস্ত্রে সজ্জিত অতিসভ্য মানুষ অপেক্ষাকৃত কম সভ্য মানুষকে
ফেলতেই পারে অ-নেক নীচে, সভ্যতার চূড়া থেকে এক ধাক্কায়
এ দৃশ্যায়নের অভিনেতা সবাই, কেউ কেউ পরিচালক ।।

অবশিষ্ট হাড় - ০৪ (০৩ মে ২০১০)


সূর্যের স্বেচ্ছাচারিতায় ভোরের নতুন নাম সকাল
মেঘসংক্রান্ত আড়াল সত্ত্বেও কমতি নেই উষ্ণতার আভিজাত্যের
একপেশে সুখকে আটকে রাখা দশ-বারোর এই ঘর
বাথরুম-বারান্দায় চেনা সমীকরণ
চিরচেনা ফেরিঅলাদের আনাগোনা বাড়তে বাড়তে
তেতে ওঠে গনগনে রোদ
তখন তার নাম হয় দুপুর;
বিপ্লবের ঘনিষ্টতম অধ্যায়সমূহ আজও শিরোনামহীন
ভান করে বাঁচা বিপ্লবীরা প্রত্যেকেই ধূমপায়ী
উনারা বিপ্লব জ্বালিয়ে ধোঁয়া নেন,
গোবেচারা জনসাধারণ ঘুমন্ত চোখে পত্রিকা দ্যাখে
মাংস দেখে লোল টানে
রক্ত দেখে শিউরে ওঠে ।।

বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০১০

অবশিষ্ট হাড় - ০৩ (০৩ মে ২০১০)


একা কোন গাছের শব্দ নিঃশ্বাস
একবাক্যে জানায় ক্ষুধা সর্বনাশ
এখানে শীতের প্ররোচনায়
উত্তপ্ত গ্রীষ্মের ভালবাসা কড়া রোদ
তারপর এক অনিবার্য শীতল অধ্যায়
যাকে সন্ধ্যা বলা যায়;
কাকে বলে সুন্দর
সুন্দর কি এই জিজ্ঞাসা
বোকা বলে, জগতের যাবতীয় অভিবাসী
ওরা কিন্তু ঠিক বলে ভালবাসি
সুযোগ পেলেই
তারপর কামড়ে আনে সরলতা;
মানুষ বোঝার অপচেষ্টা নয়
মানুষ বড়ই বাজে বিষয়
একা খাবে, একাই খাবে
নিরীহরা হতাশ এবং নির্বিকার
অনেকটা আমার মতন;
কে জানে, কতবার ভুল করে সমুদ্রের হাওয়া
বাড়াবাড়ি হচ্ছে জানি
সে এক ঘুমের ইতিহাস,
রাতের অশ্রুদের রঙ বোঝা জরুরী
খুঁজতে হচ্ছে হাড় অবশেষ ।।

বুধবার, ২ জুন, ২০১০

অবশিষ্ট হাড় - ০২ (০২ জুন ২০১০)


বাতাসের সচেতন চলাচল, দুপুর দুর্বল
চেতনার প্রপেলারে শম্বুক গতি
নিরাবেগ শরীরময় স্থিতি
সভ্যতার দীর্ঘশ্বাস তবু শ্রাব্য;
আযানে, আহবানে তাল দেয় বিমান সংগীত
বারান্দায়, হাওয়ায়, দরজায় কাঁপা কাঁপা আর্তনাদ
রিকশা টুং টাং, মটরচাকায় ঘষটানো অভিমান
খুটে খাওয়া ছেলে, দুটো টাকা পেলে
পাউরুটি, ছোলামুড়ি, পোকা খাওয়া আপেল;
সমান্তরালে বিদ্যমান বিপুল, প্রাচীন দোকান
মহাজনী ফর্দের আনুষঙ্গিক ফাঁকিতে
রুচিশীল, সামাজিক, অভিশপ্ত ব্যবসা
কখনও কখনও অন্দরের অপ্রত্যাশিত ডাকে
মানবিক কষ্টে গড়ি অলংকার
এরই মাঝে এক মুঠো সুখ দিল কেউ, নির্ভরতার
বাতাসের মন, ভুলের শরীর, তার ।।

অবশিষ্ট হাড় - ০১ (৩১ মে ২০১০)


রোগাক্রান্ত দুপুর,
আবেগের রেখাগুলো প্রান্তিক মেঘকে ছাড়িয়ে বিমুক্ত আকাশের দিকে,
নিজস্ব অবশিষ্ট হাড়, উইপোকায় কাটা ডায়েরী সংক্রান্ত পরিমিত অনুভূতি,

সম্পর্কের দেয়ালগুলো এখানেই ছিল দন্ডায়মান,
আজ কিছু ফণিমনসার শরীর, আর বিষণ্ন শুকনো এক ফুল,
মাটিতে গাঁথা পুরনো ছুরিটা মরচেধরা,

কেউ বোধহয় দেখেনি, পালানো যাক তবে... এ জন্মের মতো ...