বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ওত্তো রেনে কাস্তিইয়োর প্রতি


তোমার তখন একত্রিশ
তাজা আগুনের স্বাদ নিতে নিতে চূড়ান্ত নির্বাসন,
এই ওরা পেরেছিল বারবার, যার শুরু যখন তুমি সতেরো,
খুঁজেছিলে সাধারণের স্বপ্ন আর বিপ্লব রাজনীতির ভুল পথে
অথবা যার কোন পথ নেই,
বলেছিলে গল্প, হাতিয়ার আর ক্ষুধার চিরন্তন সংঘাতের
চোখে তুলেছিলে আঙুল সেইসব বুদ্ধিজীবীদের যারা রাজনীতি করেনা,
শুধু প্রচুর সুখে আর প্রাচুর্যে হয়ে থাকে অথর্ব, অকেজো
শিখিয়েছিলে বিপ্লবের দ্যুতিময় অক্ষরগুলোকে কী করে
গাঁথতে হয়, বাসতে হয় নিজস্ব আবেগ এবং ভাষায়
আর গার্সিয়ার সেই বিধবা, সাতাত্তরের সেই বৃদ্ধা
আর তার গিলে ফেলা অপমান এবং বাসোচ্ছেদের কান্নার ফোঁটা
হি হি করা ঠান্ডার ভেতর অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে, অবিচারের কষ্ট,
আন্তোনিও আর তার নীল পাখি, স্পার্তাকুস আর তার ভাইদের জন্য
যারা রোমক ক্রুর অত্যাচারে ক্রুশে বিদ্ধ হবার পরও
বাতাসের কানে বলে গেছে, এসপেরানসা - আশা
করেছিলে প্রাচীন প্রশ্ন, অবস্থাপন্নের কুকুর আর দরিদ্রের কপাল
ভুগোলবিহীন ভালবাসা, লবণাক্ত তারার গল্প
আর বলেছিলে নির্বাসন, যা কিনা দীর্ঘ এক এভিনিউ
একা পথ হাঁটে তুমুল বিষাদ, সঙ্গী অসহ যন্ত্রণা ;

বরফের ভেতর তোমায় দেখেছি,
কোন এক আলোকচিত্রী তুলতে চেয়েছিল তোমার চোখ
পুরু ফ্রেমের আড়ালে, ছেপে দিয়েছিল বিষাদময় সৌম্যকান্তি
আর গোটা জীবন ঝাপসা মেঘের আড়ালে
গুয়াতেমালা আর গুয়াতেমালানদের জন্যে বিপ্লব
তোমার স্বপ্ন ।।
______________________________
২১ আগস্ট ২০১০
(কৃতজ্ঞতা : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)



[ওত্তো রেনে কাস্তিইয়ো : গুয়াতেমালান কবি, বিপ্লবী এবং নাট্যকার । ১৯৩৬ এ জন্ম, রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন । সতেরো বছর বয়সে নিজ দেশ হতে দশ বছরের জন্য নির্বাসিত হন এবং এল-সালভাদর চলে যান । সেখানেই তার পড়াশোনা এবং সাহিত্যচর্চা । সেখানে কবি রক ডালটন এর সঙ্গে তার পরিচয় হয় । ওত্তো ১৯৫৬ সালে "Autonomia" পুরস্কার লাভ করেন । পরের বছর World Youth Festival - এ তিনি শ্রেষ্ঠ তরুণ কবির পুরস্কার পান ।

নির্বাসন শেষে ১৯৬৪ সালে তিনি নিজ দেশে ফেরেন এবং Teatro Experimental de la Municipalidad নামে একটি থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৬৫ সালে গুয়াতেমালান সরকার তাকে পুনরায় নির্বাসনে পাঠায় । ১৯৬৬ সালে তিনি গুয়াতেমালায় ফিরে আসেন এবং F.A.R. (Armed Revolutionary Front) এ যোগ দেন । ১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে ওত্তো তার গেরিলা গ্রুপ সমেত বন্দী হন । ১৯ মার্চ ১৯৬৭ তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় ।]

রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১০

রীতু :: প্রত্যাবর্তন (ছয়)

রীতু শোন বলি
এসব রাত কত বিচ্ছিরি
বুকের প্রচুর নীচে অর্থহীন আঁধার
ট্রাম্পেট করে
দু'হাত ভরে তুলে আনি
গমকে ওঠা কান্নার ফেনা
শোনই না রীতু
এসব রাত বড় চুপচাপ
এমন তুমুল সব ব্যথায় ঝুপ করে পড়ে
হাত-পা ছুঁড়তে থাকি আনাড়ির মতন
অন্তর্গত সংগ্রামে
বিপুল উদ্যমে
দেহের বন্দর বাঁকাতে বাঁকাতে
একবার দেখোই না রীতু
হয়ে গেছি কেমন কাঙাল
কেমন পতিত নিথর
কে বোঝাবে কাকে
এক জন্মের হিসেব তো নয়
এতবার পাশ ফিরে
পাশবালিশের ওপারে
কেবল এক অনস্তিত্বের পরিশ্রুত মায়া
দেখোই না রীতু
কতটা সাদা এই যন্ত্রণা
কতটা পাগল হবে একাকী মানুষ
কতটা পাগল হবে বিবাগী মানুষ

________________________
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

ছ ছ'টা জিজ্ঞাসা

ক'ফোঁটা শিশির পেলে ঝুঁকে পড়ে দীর্ঘ ঘাস
কতখানি রোদ শুষে সোমত্ত সূর্যমূখী
কারা কারা হেঁটে গেল পর্দা টানে বুক
কেমন বিকেল এলে তুমুল ছটফট
ক'বেলা না খেতে পেলে মানুষ কুকুর হয়
ক'বিন্দু বিষাদ বুকে কবি হয় বারোয়ারি মন ।।

______________________
১১ সেপ্টেম্বর ২০১০

বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

আরোহী

একটাই পথ
ভীষণ ঠান্ডায় যাতে
আঙুলে আঁকড়ে উঠেছি বহু মাইল,
অপ্রাসঙ্গিক যত বিষাদ টিনের বাকশে
ফার্মেন্টেড মাছের মত বিদ্যমান,
যা কিছু নখ সেতো ভেঙ্গেছে - উঠেছে
সেই কবে, হারিয়ে যাওয়া শ্বাসের বাতাসের সাথে,
পুরু চামড়ার নীচে তরল বিষ বাড়তি
প্রয়োজনে জন্তু হই...

থ্যাঁতলানো নাক আর তোবড়ানো গালের দিব্যি
যে কোন ধরণের মাংসকেই প্রাধান্য দিই ।।


০২ সেপ্টেম্বর ২০১০