মঙ্গলবার, ২৬ জুন, ২০১২

ভুল বিজ্ঞানে হাসে ধান

কখনও কখনও তাই, যদি আয়োজনে বাঁধতে যাই
এরপরও ঠিক করে কওয়াও তো মুশকিল
পিচ্ছিল পৃথিবী, কিছুই যে ধরেনা তার গায়

দেখতে দেখতে
বুঝি উড়ে আসে স্নিগ্ধ লোবান
জাতিস্মরের সাধ,
ভুল বিজ্ঞানে হাসে ধান
চিরায়ত নদীর বিধান
সভ্যতার ধারালো পাথরে আহত আমরা, এই তো চাই
প্রতিটি শব্দ হোক একেকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য শব্দকবিতা

শনিবার, ২৩ জুন, ২০১২

এত আলো প্রয়োজন নেই


এত আলো প্রয়োজন নেই, আঁধার উপাদেয়
ঢেকে দাও নক্ষত্রের শরীর
যদি লুফে নিতে হয়
হেমলক অথবা হলাহল সেও রাজি
থামতে বলো পৃথিবীকে

উড়ে যাচ্ছে স্বপ্নের পৃষ্ঠারা, তীব্র বাসনার
অতিপৃক্ত অভিমানের কষ
নীরব হচ্ছে হৃদয় ক্রমশঃ
আর কোন শব্দ হবে না

ক্রমশঃ প্রার্থীরা অগণিত
রক্তের পিপাসা বাড়ে, নাব্যতা নেই
থেকে থেকে হেরে যায় নদী
তাকে তুলে আনো বারান্দায়
রোদ ঝরে যায়, মরে যায়
আর কত দেরী হবে তোমার

এদিকে
সীমাহীন বাণিজ্যে কেবলই অপহরণ
কতটা দুর্লভ আজ আকাশ
কতটা দুর্লভ আজ আকাশ
ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে রঙ

কখনও কখনও মনে হয়
প্রযুক্তিকে, সভ্যতাকে না-করে দিই
না-করে দিই, আর পারা যায় না
মাঝে মাঝে ভাবি ছেড়ে যাবো দাবার ছক
বুদ্ধিবৃত্তিকে আজ বড়ো অসহ্য লাগে
বেমানান লাগে,
আর কত দেরী হবে তোমার
দুলে দুলে কেঁপে উঠছে অপেক্ষা
দুলে দুলে কেঁপে উঠছে অপেক্ষা

অদ্ভুত
আজও পৃথিবীকে উল্টো দেখতে ইচ্ছে করে


ঘুড়ি উড়ে যায়

ছেঁড়া মনে চেয়ে থাকা সাদাটে আকাশ
ধুলো রোদে পেকে ওঠা হেঁয়ালী বাতাস
ঘুড়ি ওড়ে না, ঘুড়ি ওড়ে না
ঘুড়ি ওড়ে না কখনও ঘুড়ি ওড়ে না
অজস্র তার, তারের মিছিল
আকাশকে টুকরো টুকরো করে যায়
ছেঁড়া মনে শুয়ে থাকা টুকরো আকাশ
ধুলো রোদে বেঁকে যাওয়া ছলনা বাতাস
একা করেনা, একা হতে দেয়না
একা করেনা কখনও একা হতে দেয়না

বিদ্যুত আসে যায় আঁধারকে টানতে
শহরটা পাল্টায় হঠাৎ অজান্তে
আলো আসে আলো যায় বাঁধা পড়ে জানলায়
রঙমাখা মুখগুলো সংলাপ আওড়ায়
দ্বিধাহীন মৌমাছি শপথের গান ভুলে
এলোমেলো এলোমেলো বাকহীন কোলাহলে
নাটকের হাতে হাত, সংসার টিকে থাক
মানুষ বাড়তে থাক, ভালোবাসা লেখা থাক

নাটকের হাতে হাত,
সংসার টিকে থাক
মানুষ বাড়তে থাক,
ভালোবাসা লেখা থাক

ভোর হোক ধুয়ে যাক আঁধার কালো
আলোর ডানায় উড়ে আসুক আলো
ঘুড়ি উড়ে যায়, ঘুড়ি উড়ে যায়
ঘুড়ি উড়ে যায়, বেঁধে রাখা যায় না
সাদাটে আকাশ
হেঁয়ালী বাতাস
পুরোটা আকাশ
প্রবলা বাতাস

একা করেনা, একা হতে দেয়না
একা করেনা কখনও একা হতে দেয়না



সরে সরে যাচ্ছে জানালা

সরে সরে যাচ্ছে জানালা
সরে সরে যাচ্ছে আকাশ আর
আমাদের চোখ যেন বুঁজে আছে একা
সরে সরে যাচ্ছে পৃথিবী
সরে সরে যাচ্ছি আমরা
এক একটা দ্বীপ যেন শুয়ে আছি একা
সরে সরে যাই হতচ্ছাড়া

সভ্যতার হাতে বাঁধা আছে আঙুল এবং সময়
প্রযুক্তির সাথে গেঁথে অনুভূতি হৃদয়
যুক্তির ষাঁড় যা যা লিখে গেছে ইতিহাস তাতেই
খিদে পাওয়া জিব শুকিয়ে ওঠে অস্তিত্ব কি নেই
সরে সরে যায় ভালবাসা

সরে সরে যায় ভালবাসা
আমাদের মিথ্যে কুয়াশা
এক একা বুক যেন ব্যবহারিক খাতা
সম্পর্কের সমাকলনে
আদর্শগত ব্যবধানে
চাহিদির বৈপরিত্য আর
প্রতারণার চাবুক
মূলধনহীন ব্যবসানীতি
অবয়বহীন প্রতিকৃতি
ন্যায়-অন্যায়ের দ্রবীভূত স্বাদ
মাথা ও মন শিখুক
সরে সরে যাচ্ছে চেতনা

সরে সরে যাচ্ছে চেতনা
যাচ্ছি কোথায় তা জানিনা
দাবার চাল ভুল হয়ে গেলে
আবেগে ভুল হয়ে গেলে
হিসেবে ভুল রয়ে গেলে
গণতন্ত্র খাটেনা

সরে সরে যাচ্ছে জানালা
সরে সরে যাচ্ছে আকাশ আর
আমাদের চোখ যেন বুঁজে আছে একা
সরে সরে যাচ্ছে পৃথিবী
সরে সরে যাচ্ছি আমরা
এক একটা দ্বীপ যেন শুয়ে আছি একা
সরে সরে যাই হতচ্ছাড়া



______অ_
০২.০২.১২

আয়রে আয়রে আয়রে দিন

আয়রে আয়রে আয়রে দিন
আয়রে আয়রে আয়
আয়রে আয়রে আয়রে দিন
আয়রে আয়রে আয়

রঙ নিয়ে আয়
প্রেম নিয়ে আয়
নিয়ে আয় ঘ্রাণ

স্বপ্ন নিয়ে আয়
ইচ্ছে নিয়ে আয়
নিয়ে আয় প্রাণ

আয়রে আয়রে আয়রে দিন
আয়রে আয়রে আয়
আয়রে আয়রে আয়রে দিন
আয়রে আয়রে আয়

রঙ ~ প্রেম ~ ঘ্রাণ


স্বপ্ন ~ ইচ্ছে ~ প্রাণ


এখন সন্ধ্যা হবে

এখন সন্ধ্যা হবে
হাজারে হাজারে পা
পৃথিবীর পথে
আলাদা আলাদা প্রাণ
ভীড় করে শয়তান

এখন এখন


অচেনা পৃথিবীতে
সুখেরা প্রতিরাতে
কোনো বুক নেই
বুক থাকে নাতো
কোনো চোখ নেই
চোখ আঁকেনাতো (২)

এখন রাত্রি ফুরাবে
হাজারে হাজারে তারা
আলোতে হারাবে
একেলা একেলা দহন
বিস্মৃত প্রতিক্ষণ

এখন এখন

কালোভরা দরিয়ার
চেতনারা ডুবে যায়
ষড়রিপু ডাকে আয়
মহাকাল সরে যায়

কোন তেপান্তরে
স্বপ্ন ঘর করে
বৃষ্টি ভেজায়
মেঘ নেই তবু
জোছনা ভরায়
ভিজে জবুথবু

এখন এখন সন্ধ্যা হবে
হাজারে হাজারে পা
পৃথিবীর পথে


এখন এখন

বাউরা-বাহার

বাতাসে সাবান
সাবানে শরীর
জল আসে জল যায় ছলাৎ ছলাৎ
মোচড়ায় চানমণি, তড়পায় মণিচান
কালো চাঁদ খান খান, জ্বরঘোরে কাতরায় কঙ্কাল বুড়াচান

ভাস্কর্যের পা
ভাস্কর্যের হাত
ভাস্কর্যের নখ, পাঁজরের হাড়
গুণি গড়ে কড়ি তার
ক্ষয়রোগ ঘর করে
সঠিক শরীরে
নেশায়-আশায় কাল-ফুসফুসে
ঘষটে ঘষটে যায় পাঙ্গাস-চালান
তরল আগুন-ফেনা উথলায়ে যায়
চানমণি মোচড়ায়, মণিচান তড়পায়
থিকথিকে জলজ ব্যথায়,
কঙ্কাল আছড়ায়
পুরাতন বোটকা জমিন,
জমিনে শোলোক লেখা, হাজারো রঙিন
কঙ্কাল হেসে ওঠে আওয়াজ বিহীন

হুঁশ আসে তার, হুঁশ যায় তার
বাপ-মা'র সাধে দেয়া নামের বাহার
বাহারে-বাহার, দুইমুঠি ভাতের আছাড়
কামড়ে-তুবড়ে করে বাউরা-বাহার

নিপুণ হাতের রগ - বাউরা
নিপুণ পায়ের হাড় - বাউরা
নিপুণ নখের গান
প্রমিত দাঁতের শান
"একে স্টেজে তোলা হোক, জনগণ গিলে খাক, শ্বাসজীবী ভাস্কর্য"
সকলই বিকায়ে যায়
পোষা ক্ষয়রোগ তার বিকায় না আর

চানমণি মণিচান, সুনসান সুনসান
বেমক্কা উথাল পাড়ে, কাঁদে ভগবান
বাউরা তলায়ে যায়, তলায়ে তলায়ে ওড়ে
উড়তে উড়তে বাড়ে শরীরের হাড়
সাতনরী হার, কাহার কল্পনার
কামে হাঁসফাঁসে জলে-জল মেশে
ভেসে আসে বাউরা-বাহার
লাউয়ের ডগার জল বিসর্জনে হাসে
বাউরারে রাত টানে, বাউরারে টানে ক্ষয়রোগ
খুকখুক কাশির হিসাব, ভগবান করে ভোগ
চপচপ চূড়ান্ত-নির্যাস, চানমণি হাহুতাশ

রাতে রাত বাড়ে, বাউরার ডাক আসে
কাঁচা কাঁচা রেয়নের ওইপাড়ে
মাতাল চৌকিদার খাকীর ভেতরে
বাঁশির চিৎকার থেকে লালার শীৎকারে
অবিকল বেজে চলে বাউরার শৈল্পিক কানে
ঘাউরা বাহার, "কনে দিমু পৈতৃক নামখান আমার!"
"বাউরা আমার, বাহার আমার"
নাকিসুরে গান ধরে অমাবস্যার হাড়
"সহস্র নিশি গেল ধোঁয়ার ভাগাড়ে,
বাউরাও মোচড়ায়, আহারে, আহারে"
দীর্ঘ রাতের ঘাম টুপটাপ মেশে আযানে আযানে
"আবার টেম্পো চরে, রিকশারে সিটি মারে"

হতভাগা কঙ্কাল, বাউরার কঙ্কাল থেমে যায়
থামতে থামতে ভাবে,
"কে টানে কলের হাতল,
কার চোখ লেপ্টে কাজল,
কার বুকে ফাল্গুন ভরামাস,
ছেলে তার বউটারে কতখানি রাখবে,
বংশের বাতি - সেই নাতি, যদি সাজে হারামজাদা,
কূলরেখা কই, কিসে ঘোঁসঘোঁস খায় বাষট্টির জীবন তাহার,
কত কত বিদ্যুত গতরে গতরে,
কত কত সুরমা, কত কত সিনান
কত কত মাগুর-চালান..."

বাউরার লাশ খায় কিরীটের বাচ্চা, বেগানা ল্যাম্পপোস্ট সাচ্চা
তারপর, পুনরায়,
বাতাসে সাবান,
সাবানে শরীর,
নর্দমায় নর্দমায়, নানান ফেনা সাঁতরায়
আলাদা আলাদা ঘ্রাণ, মাংসের বাস্তব বাগান
বাউরারে গিলে খায় সাদা ভুত
বাউরারে গিলে খায় কালো ভুত
মণিচান কান্দে, চানমণি কান্দে ঝালের অপেক্ষায়
ভগবানও কান্দে প্যাটের যন্ত্রণায়

আহারে এমন স্পেসিমেন
মরণের ওইপাড়ে, ডাক্তার উড়ে আসে হাজারে হাজারে
আহারে এমন স্পেসিমেন
"নিপুণ কণ্ঠনালী স্পেসিমেন,
নিপুণ শ্বাসের থলি স্পেসিমেন,
নিপুণ পাকস্থলি স্পেসিমেন"
ক্ষয়রোগ সুখে আছে বাউরার গায়, বাউরা ঘুমায়
নার্সেরা মোচড়ায়, ডাক্তার তড়পায়
নবীনা ব্লেডের ধার সশব্দে চিল্লায়
বেহেশতী ফরমালিন কাহাদের গিলে খায়
ঘুমা তুই বাউরা - বাহার
ঘুমা তুই বাউরা - বাহার ।।


____অ_
মে, ২০১২